ADs

আমি সাধারন তবে অসাধারণ কাজ করি, করব । আমার দেশের জন্য স্বপ্ন দেখি আর কাজ করি আমি স্বপ্নবাজ ।

সোমবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৫

বাংলাদেশর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা, দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুল্যস্ফীতির কারণে আমরা যারা ভাবি, “এই দেশে কিসসু হবে না। দেশটা একদম রসাতলে গেছে”, তাদেরকে বলছি। আশার আলো এখনো ফুরিয়ে যায়নি। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ভালো কিছুর জন্য মডেল হতে পারে। যেটি আমরা অতীতেও দেখেছি এখনো দেখছি। তারই একটি উদাহরণ এই ‘ভাসমান স্কুল’। floting school_1
ছয় বছর বয়সি মোহাম্মদ ওয়াসীমকে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তার বন্ধুদের সাথে। পিঠে তাদের নানা রঙের ব্যাগ৷ অপেক্ষা স্কুলের জন্য৷ এখানকার স্কুলে শিক্ষার্থীদের যেতে হয়না, বরং স্কুলই চলে আসে শিক্ষার্থীর কাছে ! বলছি নাটোরের চলনবিল সংলগ্ন একটি দুর্গম এলাকার কথা৷ যেখানে নৌকাতে তৈরি করা হয়েছে এমন একটি বিদ্যালয় যাতে আছে পাঠাগার এমনকি ইন্টারনেট ক্যাফেও৷ শিশু কিশোররা এসব নৌকায় চড়ে প্রাথমিক শিক্ষা নেয়, বই পড়ে আর ইন্টারনেটের ব্যবহার করে৷ বলা বাহুল্য এটিই হচ্ছে আলোচিত ‘ভাসমান স্কুল’ যার উদ্যোক্তা বাংলাদেশের তরুণ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। floting school_3
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের শতকরা ৬৬ ভাগই বাস করেন গ্রামে৷ ২০০২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মৌসুমী বন্যায় বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ এলাকা প্লাবিত হয়৷ এছাড়া বড় বড় বন্যায় দেশটির দুই তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নীচে চলে যায়৷ এই বন্যার সবচেয়ে বড় শিকার স্কুলের শিক্ষার্থীরা৷ বন্যার সময় দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০৭ সালের বন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ শতাংশ মানে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্কুল ডুবে যাওয়ার কারণে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এই শতকের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের অন্তত ১৮ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে৷ গৃহহীন হবে কমপক্ষে ৩০ মিলিয়ন মানুষ৷ তাই, পানিতে বেঁচে থাকার নানা উপায় নিয়ে গবেষণা চলছে এদেশে৷ এমনই এক তরুণ গবেষক মোহাম্মদ রেজওয়ান। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার কর্নধার তিনি৷ নিজের উদ্যোগে তৈরি করছেন একের পর এক নৌকা-স্কুল৷
রেজওয়ান তার স্কুল সম্পর্কে বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো দিনে দিনে বড় হচ্ছে৷ কারন নদীর ভাঙন বাড়ছে৷ তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরির্বতনের সঙ্গে খাপ খাওয়ার নানা উপায় ভাবতে হচ্ছে আমাদেরকে৷তিনি বলেন, ‘‘নৌকায় স্কুল, লাইব্রেরি বা ট্রেনিং সেন্টার তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সফল মডেল রয়েছে৷”
নৌকা-স্কুলের পুরোটা জুড়েই ক্লাসরুম৷এসব ভাসমান বিদ্যালয়ে সপ্তাহে ৬ দিন গড়ে চারঘন্টারও বেশি সময় লেখাপড়া করে শিক্ষার্থীরা৷ অনেকে বাড়ির ঘাট থেকেই নৌকায় ওঠে৷নৌকা স্কুলগুলোর দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট, প্রস্থ ১১ ফুট৷অন্তত জনাত্রিশেক শিক্ষার্থী একত্রে বসতে পারে সেখানে৷এক যুগের ব্যবধানে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার পরিবারের শিশুরা আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় ভাসমান স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করছে৷ ২২টি স্কুলে ১,৮১০ জন শিশু পড়াশুনা করছে৷শিক্ষক ছাড়াও তাদের জন্য রয়েছে মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার ব্যবস্থা৷ কম্পিউটার ব্যবহার করেও নানা বিষয় সেখানো হয় তাদের৷এ স্কুলের এক নিয়মিত শিক্ষার্থী হাসিনুর রহমান৷ তাঁর কথায়, আমাদের গ্রামে নৌকা পাঠাগার আসার আগে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতো না৷ floting school_2
প্রশ্ন হলো, নৌকার মধ্যে কম্পিউটার চলে কীভাবে? কিভাবেই বা জ্বলে লাইট বাল্ব? উত্তরটা কিন্তু সোজা৷ নৌকা-স্কুলের ছাদেই বসানো আছে সোলার প্যানেল, সেই প্যানেল চার্জ করে কয়েকটি ব্যাটারিকে৷ এসব ব্যাটারিই শক্তির মূল উৎস৷
এছাড়া কলম, বই – সবই থাকে বিনা খরচায়৷ তাই এই বিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের কিছুই কিনতে হয়না৷এক শিক্ষার্থী জানালেন, তাদের গ্রামে দুই থেকে তিনবার বন্যা হয়৷ বন্যার সময় অন্যান্য স্কুল ডুবে যায়৷ নৌকা স্কুল ডোবে না৷
নৌকা-স্কুলের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন মধুসুদন কর্মকার৷ তিনি বলেন, বর্ষাকালে চলনবিল এলাকায় স্কুলে যাওয়া বড় কঠিন কাজ৷ কেননা রাস্তাঘাটে পানি উঠে যায়৷ চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে অনেক এলাকা৷ তাই, নৌকা-স্কুলই ভরসা অনেকের জন্য৷

বেশ দ্রুতই রেজওয়ানের ‘ভাসমান স্কুল’ প্রকল্প নাম করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ 

একদিকে তিনি যেমন গেটস ফাউন্ডেশন থেকে ‘মিলিয়ন ডলার ফান্ড’ পেয়েছেন তো অন্যদিকে ইন্টেল তাঁকে অ্যাওয়ার্ডও দিয়েছে। সিধুলাই এর উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা চলছে দেশী বিদেশী সংবাদমাধ্যমে৷ সিএনএন থেকে শুরু করে গার্ডিয়ান পর্যন্ত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই খবরকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে৷ ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে ‘ভাসমান স্কুল’ নিয়ে রেজওয়ানের লেখা একটি নিবন্ধ৷ টুইটারে টপ ট্রেন্ড এটি৷ইতিমধ্যে এই সংস্থা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে গেটস ফাউন্ডেশনের পুরস্কার, সাসাকা এওয়ার্ড, ইন্টেল পরিবেশ এওয়ার্ডসহ বেশকিছু সম্মাননা৷ এ প্রকল্পকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে দুটি তথ্যচিত্র৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা আরও অনেক দেশে চালু হয়েছে এই নৌকা স্কুল৷ এ সব দেশের মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন্স, ভিয়েতনমি ও জাম্বিয়া৷সর্বশেষ আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমে এ ভাসমান স্কুল প্রকল্প সম্পর্কে পড়ানো হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলায় মানুষের সংগ্রামের অসাধারণ চিত্রকল্প হিসেবে৷
রেজওয়ান জানান, তিনি পুরস্কারের টাকায় নৌকা স্কুল, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রাম আলোকিত করার প্রকল্পসহ স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছেন৷ এখন তিনি কাজ শুরু করেছেন পানিতে ভাসমান সবজি চাষ এবং কৃষি খামার প্রকল্প করার লক্ষ্যে৷ আর ভাসমান স্কুলকে ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উন্নীত করার স্বপ্নও তাঁর রয়েছে৷ তবে এর জন্য আরও বেশি তহবিল প্রয়োজন৷ এ তহবিলসংগ্রহ অনেক কঠিন৷ সেই কঠিন প্রচেষ্টাই এখন চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাম্মদ রেজওয়ান৷সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা চলনবিল সংলগ্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন শিক্ষা দেবারও চেষ্টা করে৷ তবে, তাদের মূল উদ্দেশ্য নৌকা স্কুল৷ সংস্থাটি চায়, চলনবিলের এক লাখ আশি হাজার শিশু কিশোরকে নৌকায় শিক্ষা দিতে৷ এজন্য চাই আরো নৌকা, আর্থিক সহায়তা

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Follow us on facebook

Category 1

Slideshow

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *